
বাসর রাত মুমিন জীবনের অন্যতম রাত। যারা পরকীয়া করে, লিভ টুগেদার করে, তারা এ রাতের মর্ম বুঝবে না। যারা বেশ্যা বা বহুগামিতা তাদের কাছে এ রাত বাতুলতা মাত্র। আমরা এ পর্বে বাসর রাতে অবশ্য পালনীয় কিছু টিপ্স নিয়ে আলোচনা করব।
০১. গোলাপ ফুল দিয়ে দুজন দুজনাকে বরণ করে নিতে হবে।
০২. উভয়ই মহান আল্লাহকে যে ভালবাসবেন তা পরিষ্কার ভাবে দুজনা বোঝা পড়া করবেন।
০৩. হানিমুনে কোথায় যাবেন তা বাসর রাতেই ঠিক করবেন, সে ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে এটা ঠিক করতে হবে যে, সবচেয়ে পৃথিবীর মূল্যবান যায়গা মক্কা মদীনায় যাওয়া এবং ওমরা করার পরিকল্পনা করা।
০৪. ছোট খাট ভুলের জন্য কাউকে তিরষ্কার না করা। কাউকে ছোট না করা।
০৫. কোন পক্ষের আত্নীয় স্বজনকে ছোট না করা, গালি না দেওয়া, অপমান না করা।
০৬. জীবনের প্রথম ভালবাসার রাত, তাই ভালবাসা অক্ষুন্ন রাখা।
০৭. দুজনাতে একটু খোশ গল্প করা, জীবন থেকে কোন গল্প বলা।
০৮. ভবিষ্যত জেনারেশনের ব্যাপারে আলাপ সেরে নেওয়া। তবে বেশী দূর অগ্রসর না হওয়াই ভাল।
০৯. মোহরানা যদি বাকি থাকে সেটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া, অল্প দিনের মধ্যেই মোহরানা পরিশোধ করা। স্ত্রী যদি চাকুরি করে তবে টাইম টেবিলটা নিয়ে একটু পরিষ্কার করা। চাকুরি না করলে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বলা।
১০. এ রাতই হল উত্তম ভালবাসার রাত। দুজনার সব আকুতি মেশানো ভালবাসা দিয়ে দুজনাকে জয় করা। কোন ভাবেই যেন ফজরের নামাজ কাজা না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা ।
ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়েই হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা এবং তা যথারীতি আদায় করার জন্য ইসলামে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে মোহরানা প্রদান করা ফরজ।
কোরআন ও হাদীসের আলোকে মোহরানা :
মোহরানা সম্পর্কে কোরআনের বানী :
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের নিকট যে যৌন স্বাধ গ্রহন কর, তার বিনিময়ে তাদের মোহরানা ফরজ মনে করে আদায় কর।’ (সূরা নিসা-২৪)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘অতঃপর নারীদের অভিভাবকের অনুমুতি নিয়ে তাদের বিয়ে কর এবং তাদের মোহর যথাযথভাবে আদায় করে দাও।’ (সূরা নিসা-২৫)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“স্ত্রীদের প্রাপ্য মোহরানা আদায় করে দাও, খূশী হয়ে ও তাদের প্রাপ্য অধিকার মনে করে।’ (সূরা নিসা-৪)
অত্র আয়াত সমুহ প্রমাণ করে যে, মোহরানা ফরজ বা আদায় করা অপরিহার্য।
মোহরানা সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) এর বানী :
উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “অবশ্যই পূরণীয় শর্ত হচ্ছে, যার বিনিময়ে তোমরা স্ত্রীর যৌনাঙ্গ নিজেদের জন্য হালাল মনে কর।’ (বুখারী,মুসলিম)
মহানবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মেয়েকে মোহরানা দেয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু সে মোহরানা আদায় করার তার ইচ্ছে নেই, সে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’ (মুসনাদে আহমেদ)।
সুতরাং মোহরানা স্ত্রীর এমন একটি প্রাপ্য যা তিনি স্বামীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগে পাওনা হন, তবে স্ত্রী (স্বেচ্ছায় ও স্বত:স্ফূর্তভাবে) সময় দিলে বাকি রাখা যাবে। কিন্তু মোহরানার অর্থ আবশ্যিকভাবে পরিশোধ করতে হবে। বিবাহিত স্ত্রীকে অসহায় মনে করে ছলে-বলে-কৌশলে বা অজ্ঞতার সুযোগে মাফ করিয়ে নিলে মাফ না হয়ে তা হবে জুলুম-প্রতারণা। এ জুলুম প্রতিরোধকল্পে মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেন – ‘যদি স্ত্রী নিজের পক্ষ থেকে স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে মোহরের কিছু অংশ ক্ষমা করে দেয়, তবে তোমরা তা হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করতে পার।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৪)।
মোহরানা এককালীন আদায় করতে অক্ষম হলে, উত্তম হল কিছু অংশ নগদ আদায় করে বাকি অংশ পরে আদায় করা, তা ধীরে ধীরে কিস্তিতে পরিশোধ করা। তবে মোহরানা নির্ধারণ করতে হবে স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী যাতে তিনি সহজেই তা পরিশোধ করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান সমাজের দু:খজনক ঘটনা হলো-বিশাল আকারের মোহরানা বাধা হয় নামে মাত্র অথচ বহুলাংশে তা পরিশোধ করতে দেখা যায় না।
আমাদের সমাজে কি দেখতে পাচ্ছি ?
আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগেও বিয়েতে অল্প পরিমান মোহরানা ধার্য করা হতো। স্ত্রীকে প্রদান করতো কিনা আমার জানা নেই। তবে বর্তমানে বিয়েতে বেশী পরিমানে মোহরানা ধার্য করা হচ্ছে তার অন্যতম কারন হচ্ছে –
বিবাহ বিচ্ছেদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই মোহরানা বেশী ধার্য করা হয় যাতে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে ভয় পায়।
*** বর্তমানে ধনী পরিবারের বিয়েতে লোক দেখানোর জন্য কোটি টাকা মোহরানা ধার্য করা হয়।
*** মধ্যেবিত্ত পরিবারের বিয়েতেও ১০ লক্ষ টাকার উপরে মোহরানা ধার্য করা হয়।
*** নিম্মবিত্ত পরিবারের বিয়েতে ২ লাখ টাকার উপরে মোহরানা ধার্য করা হয়।
*** বিয়েতে স্ত্রীকে দেয়া স্বর্ন ক্রয়ের টাকাটা অর্ধেক অথবা পুরাটাই মোহরানা থেকে কর্তন করা হয়। আর বাকীটা পরে প্রদান করার প্রতিশ্রতি দিয়ে থাকে।
No comments:
Post a Comment